আরও দেখুন
আসন্ন সপ্তাহে EUR/USD-এর অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডারে গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টের ঘাটতি রয়েছে। জানুয়ারির প্রথমার্ধে গুরত্বপূর্ণ প্রতিবেদনগুলো (নন ফার্ম, পেরোল, CPI, PPI) প্রকাশিত হয়েছে, এবং ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং ফেডারেল রিজার্ভের বছরের প্রথম বৈঠকগুলো মাসের শেষার্ধে অনুষ্ঠিত হবে বলে নির্ধারিত হয়েছে। এটি এক ধরনের "অফ-সিজন" সৃষ্টি করেছে, যা সাধারণত খেলাধুলার ক্ষেত্রে দেখা যায়।
তবে, আসন্ন সপ্তাহটি সম্ভবত মাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়, এমনকি বছরের (বা পরবর্তী চার বছরের) জন্যও। ২০ জানুয়ারি সোমবার ডোনাল্ড ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি তার যুদ্ধংদেহী বক্তব্যের প্রেক্ষিতে, আর্থিক বিশ্ব তার প্রথম পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এদিকে, গুজব ছড়িয়েছে যে ট্রাম্পের নীতি তার বক্তব্যের তুলনায় ততটা আক্রমণাত্মক নাও হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, গত সপ্তাহে ব্লুমবার্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছে যে ট্রাম্পের টিম ধীরে ধীরে শুল্ক বৃদ্ধি বাস্তবায়নের কৌশল বিবেচনা করছে। সূত্র মতে, এই কৌশলটি "আলোচনার অবস্থানকে শক্তিশালী করার এবং মুদ্রাস্ফীতির তীব্র বৃদ্ধি প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে নেয়া হয়েছে।"
ট্রাম্পের শপথ গ্রহণে চীনের ভাইস প্রিমিয়ারের অংশগ্রহণ এবং সম্ভাব্য প্রভাব
অতিরিক্তভাবে, ঘোষণা করা হয়েছে যে চীনের ভাইস প্রিমিয়ার হান ঝেং ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। প্রথমবারের মতো একজন উচ্চ-স্তরের চীনা কর্মকর্তা মার্কিন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণে অংশ নিচ্ছেন। এছাড়াও, দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক প্রতিবেদনের জানিয়েছে যে ট্রাম্প তার প্রেসিডেন্টে মেয়াদকালের "প্রথম দিকে," সম্ভবত প্রথম 100 দিনের মধ্যে, চীন সফরের পরিকল্পনা করছেন।
যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর, চীন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি তার পূর্ব ঘোষিত মনোভাবের তুলনায় নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করেন, তাহলে মার্কিন ডলার উল্লেখযোগ্য চাপের মুখে পড়তে পারে। কারণ, এর ফলে মার্কেটের ট্রেডারদের মধ্যে ঝুঁকি গ্রহণের প্রতি আগ্রহ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। অন্যদিকে, যদি ট্রাম্প তার টিমের এই "নমনীয়" এবং উদার প্রস্তাবগুলো প্রত্যাখ্যান করে এবং কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন, তাহলে ফলাফল ভিন্ন হতে পারে। এমন ইঙ্গিত আছে যে এমনটি ঘটতে পারে; উদাহরণস্বরূপ, ট্রাম্প সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্টের একটি প্রতিবেদনের দাবি অস্বীকার করেছেন, যেখানে বলা হয়েছিল যে তার শুল্ক পরিকল্পনা শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ আমদানির ওপর প্রভাব ফেলবে। তিনি এই প্রতিবেদনকে "ভুয়া" বলে অভিহিত করেছেন।
এদিকে, জার্মানির অর্থনীতি মন্ত্রী রবার্ট হাবেক বলেছেন যে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর, জার্মানি-মার্কিন বাণিজ্য শুল্ক "ইউরোপে প্রধান লক্ষ্যবস্তু" হয়ে উঠবে।
EUR/USD-এর অনিশ্চয়তা এবং অবশ্যম্ভাবী অস্থিরতা
অন্য কথায়, অনিশ্চয়তা বজায় রয়েছে এবং ট্রাম্পের অবস্থান যাই হোক না কেন, EUR/USD পেয়ারের মূল্যের অস্থিরতা অবশ্যম্ভাবী। বিশেষজ্ঞদের সাধারণ মতামত অনুযায়ী, নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার দায়িত্বের প্রথম দিনগুলোতে প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাহী আদেশএ (এক্সিকিউটিভ অর্ডার) স্বাক্ষর করবেন, যা কংগ্রেসকে বাইপাস করে জারি করা হয়। ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে যে এই আদেশগুলোর একটি তালিকা, যাতে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত থাকবে, 20 জানুয়ারি স্বাক্ষর করা হবে। এই প্রাথমিক পদক্ষেপগুলো প্রতীকী এবং প্রদর্শনমূলক হবে, যা EUR/USD-এর মূল্যের অস্থিরতা বাড়াবে। প্রশ্ন হলো, এই অস্থিরতা ক্রেতাদের পক্ষে যাবে নাকি বিক্রেতাদের।
আসন্ন সপ্তাহের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: শপথ গ্রহণ এবং অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডার
ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ এবং তার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত আগামী সপ্তাহের মূল আলোচ্য বিষয় হবে। তবে, অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশের কথা রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, মঙ্গলবার ZEW অর্থনৈতিক অনুভূতি সূচক প্রকাশিত হবে। প্রাথমিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই সূচক হ্রাস পেতে পারে। বিশেষ করে, জার্মানির অর্থনৈতিক অনুভূতি সূচক জানুয়ারিতে 15.2 পয়েন্টে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে (ডিসেম্বরে 15.7 থেকে)। একইসঙ্গে, ইউরোপের সামগ্রিক অনুভূতি সূচক 16.6 পয়েন্টে নেমে আসার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যা আগের মাসে 17.0 ছিল।
বুধবার, 22 জানুয়ারি, ইসিবির প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ড একটি ভাষণ দেবেন। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে তিনি উল্লেখ করেছেন যে ইসিবি ইউরোপীয় অঞ্চলের মুদ্রাস্ফীতি মাঝারি-মেয়াদী 2% লক্ষ্যমাত্রার দিকে কমানোর লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছে। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে মূল সূচকগুলো এই লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হলে সুদের হার আরও কমানোর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। যদি লাগার্ড এই বার্তাটি পুনর্ব্যক্ত করেন, তাহলে ইউরো আরও চাপের মুখে পড়তে পারে, যা এটির মূল্যের নিম্নমুখী প্রবণতাকে ত্বরান্বিত করবে।
এই পরিস্থিতি বিশেষত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে যদি জানুয়ারির PMI সূচকগুলোর ফলাফল প্রত্যাশার নিচে আসে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, জার্মানির উৎপাদন সংক্রান্ত PMI সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে 42.5 থেকে 42.9-এ পৌঁছাবে, তবে এটি এখনও সংকোচন অঞ্চলে থাকবে। অন্যদিকে, পরিষেবা খাতের PMI ডিসেম্বরের স্তর 51.1-এ স্থির থাকার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যা সম্প্রসারণ নির্দেশ করে। ইউরোজোনের PMI সূচকগুলোতেও অনুরূপ প্রবণতা প্রত্যাশিত। যদি প্রকাশিত প্রতিবেদনের ফলাফল হতাশাজনক হয়, তাহলে ইউরোর ওপর উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি হতে পারে।
"নীরব সময়" এবং মার্কেটের ট্রেডারদের দৃষ্টি আকর্ষণ
এটি উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে আগামী সপ্তাহে "নীরব সময়" শুরু হবে—ফেডের বৈঠকের আগের 10 দিন, যখন নীতিনির্ধারকরা জনসমক্ষে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন।
ফলস্বরূপ, তুলনামূলকভাবে শান্ত অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডার এবং এই নীরব সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এ সপ্তাহের প্রধান সংবাদদাতা হিসেবে তুলে ধরেছে। যুক্তরাষ্ট্রের 47তম প্রেসিডেন্ট হয়তো তার প্রাথমিক নীতিমালা নমনীয় করএ ডলারকে দুর্বল করতে পারেন, অথবা তার ক্যাম্পেইনের প্রতিশ্রুতি ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন শুরু করলে ডলারের দর বৃদ্ধি ঘটাতে পারেন।
D1 টাইমফ্রেমে EUR/USD-র টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
রD1 টাইমফ্রেমে, EUR/USD পেয়ার বর্তমানে বলিঙ্গার ব্যান্ডসের মধ্যম এবং নিম্ন লাইনগুলোর মধ্যে ট্রেড করছে এবং এই পেয়ারের মূল্য ইচিমোকু সূচকের সমস্ত লাইনের নিচে অবস্থান করছে, যা একটি বিয়ারিশ "প্যারেড অব লাইন্স" সিগন্যাল নির্দেশ করে।
এই পেয়ারের মূল্যের নিম্নমুখী প্রবণতার প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা 1.0230 (দৈনিক চার্টে বলিঙ্গার ব্যান্ডসের নিম্ন লাইন)। প্রধান লক্ষ্যমাত্রা 1.0150 (সাপ্তাহিক চার্টে বলিঙ্গার ব্যান্ডসের নিম্ন লাইন)।
শুধুমাত্র তখনই লং পজিশন বিবেচনা করা উচিত, যখন পেয়ারটির মূল্য 1.0360 রেজিস্ট্যান্স লেভেলের উপরে কনসোলিডেট করবে (শুধু টেস্টের পরিবর্তে), যা বলিঙ্গার ব্যান্ডসের মধ্যম লাইন এবং D1 চার্টে কিজুন-সেন লাইনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।